দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে সোনার দাম। এখন ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা কিনতে গুনতে হচ্ছে লাখ টাকা। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে স্বর্ণ। এ কারণে সোনার বাজারে ক্রেতার সংকট দেখা দিয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।
জানা গেছে, গত এক বছরে দেশে ভালো মানের সোনার দাম প্রতি ভরিতে বেড়েছে সাড়ে ২০ হাজার টাকা। গত শনিবার বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রায় এক লাখ টাকায় ঠেকেছে এক ভরি সোনার দাম। প্রতি ভরি সোনার দাম একদিনে বাড়ানো হয়েছে ৭ হাজার ৪৯৪ টাকা।
আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারে সোনার দামের দোহাই দিয়ে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়িয়েছে বাজুস। দাম কমানোর ক্ষেত্রেও একই কথা বলা হয়। এভাবে মূল্য বাড়ানো-কমানোর মধ্যে চলছে সোনার বাজারের নিয়ন্ত্রণ।
তবে এবার সোনার দাম বাড়ানোর পরের দিন রোববার (১৯ মার্চ) থেকে বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ জুয়েলারি দোকানগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, মৌচাক, বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট এলাকার জুয়েলারি দোকানগুলোতে এ চিত্র দেখা গেছে।
দেখা গেছে, বায়তুল মোকাররম মার্কেটে অধিকাংশ দোকানেই ক্রেতা নেই। ক্রেতার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন বিক্রেতারা। সারাদিনে হাতেগোনা দুয়েকজন ক্রেতা আসলেও দাম শুনেই কেটে পড়ছেন তারা। এতে বেশ হতাশ ব্যবসায়ীরা। এভাবে আর কিছুদিন চলতে থাকলে জুয়েলারি ব্যবসা সংকটে পড়বে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ৭ হাজার ৬৯৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮ হাজার ৭৯৪ টাকা। দেশের ইতিহাসে আগে কখনো সোনার দাম এত বাড়েনি। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৭ হাজার ২৯০ টাকা বাড়িয়ে ৯৪ হাজার ৩০৩ টাকা করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৬ হাজার ২৪১ টাকা বাড়িয়ে ৮০ হাজার ৮৩২ টাকা করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ৫ হাজার ১৩২ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৭ হাজার ৩০১ টাকা।
গত বছরের ৩ মার্চ ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকা। ২১ ক্যারেটের ৭৪ হাজার ৭৬৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম ৬৪ হাজার ১৫২ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি কিনতে লাগতো ৫৩ হাজার ৪২১ টাকা।
বাজারে সোনার দাম পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এক বছরে ২২ ক্যারেটের সোনা প্রতি ভরিতে বেড়েছে ২০ হাজার ৫২৯ টাকা। ২১ ক্যারেট মানের সোনার দাম বেড়েছে ২০ হাজার ১৩৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ১৬ হাজার ৬৮০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম প্রতি ভরিতে বেড়েছে ১৩ হাজার ৮৮০ টাকা।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ার কয়েকদিন পরে দেশের বাজারে দাম বাড়ায় বাজুস। এবার আন্তর্জাতিক বাজারেই সোনার দাম বেড়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য দেশের বাজারে সোনার দাম বেড়েছে। তাতে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে সোনার দাম। ইচ্ছে থাকলেও এখন ক্রেতা সোনার গহনা কিনতে আসছেন না।
করোনা পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী মন্দা অর্থনীতির ধাক্কা আমাদেরও লেগেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় যে হারে বেড়েছে সেভাবে আয় বাড়েনি। মানুষ মৌলিক চাহিদা মেটানোর পর আনন্দ বিনোদন করে, শখের জিনিস কেনেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে উৎসবে-আনন্দে সোনা কেনার মতো টাকা-পয়সা মানুষের হাতে নেই, তাই শখও হয় না।
রাজধানীর আমিন জুয়েলার্সের বায়তুল মোকাররম শাখার এক বিক্রয় কর্মকর্তা বলেন, সোনার দাম বাড়লে বেচাকেনা কমে যায়। এখন ভালো মানের সোনার ভরি এক লাখ টাকা। এখন লাখ টাকা দিয়ে কেউ প্রয়োজন ছাড়া সোনা কিনতে আসবেন? দাম বাড়ার কারণে ক্রেতা নেই, বেচাকেনাও কম।
একজন ক্রেতা জানান, আমার ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। ঈদের পরে বিয়ে। তাই রোজার আগেই গহনা কিনতে এসেছি। এসে দেখি সোনার ভরি লাখ টাকা। তাতে যে পরিমাণ সোনার অলঙ্কার কেনার কথা ছিল তা কেনা সম্ভব হবে না। শুধু সোনার একটি আংটি কিনেছি। অন্য গহনা পরে কিনব, দেখি দাম কমে কি না।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ রেজাউল হক(রনি),
কারিগরি সহযোগিতায়: অক্ষ টেক