ঢাকা    ১৬ জুন ২০২৫ ইং | ২রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি

প্রশংসায় ভাসছেন মধুপুরের কলিয়াকুড়ি প্রত্যন্ত গ্রামের গরীবের হাসপাতালের ডা. জেসন-মারিন্ডি দম্পতি

  • আপডেটের সময় : সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২.৫৪ অপরাহ্ণ
  • ১৮৪ বার পঠিত

ইত্যাদির প্রতিবেদন ভাইরাল

মধুপুর (টাঙ্গইল) প্রতিনিধি ডাক্তার এড্রিক বেকার ‘‘ডাক্তার ভাই’’ তাকে সবাই গরীবের ডাক্তার হিসাবেই সারা দেশার মানুষ চিনতেন। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার উত্তরে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় কালিয়াকুড়ি গ্রামে গরিবের জন্য হাসপাতাল গড়ে তুলেন। এড্রিক বেকার মারা যাওয়ার পর দায়িত্ব নিয়েছেন আমেরিকান ডাক্তার দম্পত্তি জেসন-মারিন্ডি।
গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) বিটিভিতে প্রচারিত হানিফ সংকেতের ইত্যাদি অনুষ্ঠানে এই দম্পত্তিকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়। হতদরিদ্র মানুষদের জন্য নিউজিল্যান্ডের চিকিৎসক এড্রিক বেকারের প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালের হাল ধরে প্রশংসায় ভাসছেন আমেরিকান ডাক্তার এই দম্পত্তি।
জানা যায়, ৩২ বছর গ্রামের হতদরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা দেন এড্রিক বেকার। ১৯৪১ সালে এড্রিক বেকার নিউজিল্যান্ডের একটি ক্যাথলিক ধনী সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন পরিসংখ্যানবিদ। মা বেট্রি বেকার শিক্ষক। চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে দ্বিতীয় এড্রিক ডুনিডেন শহরের ওটাগো মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এমবিবিএস ডিগ্রী লাভ করেন। পরে ওয়েলিংটনে ইন্টার্নি শেষে নিউজিল্যান্ড সরকারের সার্জিক্যাল টিমে যোগ দিয়ে চলে যান যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনামে। সেখানে কাজ করেন ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। তিনি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কোর্স করেন ট্রপিক্যাল মেডিসিন, গাইনি ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে। ১৯৭৬ সালে পাপুয়া নিউগিনি ও জাম্বিয়ায় যান। কিন্তু কোথাও মন টেকে না। এরই মধ্যে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে চলে যান যুক্তরাজ্যে। এক বছর পর সুস্থ হয়ে ১৯৭৯ সালে চলে আসেন বাংলাদেশে। হুট করে বেকার বাংলাদেশে চলে এসেছেন এমন নয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা, ভারতগামী শরণার্থীদের ছবি নিয়মিত ছাপা হতো। এসব ছবি দেখে নিউজিল্যান্ডের তরুণ চিকিৎসক বেকারের মন কাঁদত বাংলাদেশের মানুষের জন্য। এড্রিক বেকার মনেমনে সংকল্প করেন একদিন এ দেশে আসবেন। ১৯৭৯ সালে তিনি এলেন বাংলাদেশে। সেই যে এলেন আর ফেরা হলো না। সেখান থেকেই টাঙ্গাইলের মধুপুরগড় এলাকায় অবস্থান করে এ দেশের হতদরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন বেকার। সে থেকে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিতে শুরু করেন ডা. এড্রিক বেকার। ১৯৮৩ সালে দু’জন খন্ডকালীন এবং তিনজন সার্বক্ষণিক কর্মী নিয়ে বেকারের যাত্রা শুরু হয়। দিনদিন বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা। তখন থানার বাইরের পাশের গ্রাম কাইলাকুড়িতে ১৯৯৬ সালে উপকেন্দ্র খুলে চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু করেন। ২০০২ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে ৯৩ জন গ্রামীণ তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষিত করে কাজ শুরু করেন। এলাকার আদিবাসী-বাঙালি প্রায় সবাই হতদরিদ্র। এ রকম একটি প্রত্যন্ত এলাকায় চার একর জায়গার ওপর ডা. এড্রিক বেকারের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছোট-ছোট মাটির ২৩টি ঘরে হাসপাতালের ডায়াবেটিস বিভাগ, যক্ষা বিভাগ, মা ও শিশু বিভাগসহ আলাদা অনেক বিভাগ চালু করেন। এখানে ভর্তির সময় রোগীর জন্য ২০০ টাকা এবং রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনের জন্য ১০০ টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যেই রোগীর থাকা-খাওয়াসহ যতদিন সময় লাগে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ডা. এড্রিক বেকার তার নিজ দেশে নিউজিল্যান্ড থেকে আর্থিক সাহায্য এনে এখানকার দরিদ্র লোকদের সেবা প্রদান করতেন।
ডা. এড্রিক বেকার দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ২০১৫ সালে মারা যান। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিতে চাইতে তিনি যান নি। তিনি মৃত্যুর আগে চেয়ে ছিলেন বাংলাদেশি কোনো ডাক্তার যেন গ্রামে এসে তার প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালের হাল ধরেন। কিন্তু এ দেশের একজন ডাক্তারও তার সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তবে দেশের কেউ সাড়া না দিলেও এড্রিক বেকারের আহ্বানে সাড়া দেন আমেরিকার দম্পত্তি ডাক্তার জেসান ও মারিন্ডি।
মধুপুরের কালিয়াকুড়ি গ্রামের গরীবের হাসপাতালের ডাক্তার জেসন জানান, ডাক্তার এড্রিক বেকার বেঁচে থাকার সময় কালিয়াকুড়ির এই হাসপাতালটি পরিদর্শনে এসেছিলাম। পরবর্তীতে ডাক্তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনি। কিন্তু তখন নিজের প্রশিক্ষণ ও ছেলেমেয়েরা ছোট থাকার কারণে আসতে পারেননি। অবশেষে সবকিছু গুছিয়ে সম্পদ আর সুখের মোহ ত্যাগ করে ২০১৮ সালে পুরো পরিবার নিয়ে আমেরিকা ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে আসি টাঙ্গাইলের মধুপুরে আর ‘‘নতুন ডাক্তার ভাই’’ মারিন্ডি ‘‘দিদি’’ পরিচিত হয়ে উঠি। জেসন আরো জানান, গ্রামের স্কুলে আমাদের সন্তাদের ভর্তি করে দিয়েছি। তারা গ্রামের শিশুদের সঙ্গে পড়ালেখা ও খেলাধূলা করে। ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশি ডাক্তারদের গ্রামে গিয়ে হতদরিদ্র মানুষের সেবার জন্য আহ্বানও জানান।
এলাকাবাসী জানান, আমাদের নতুন ডাক্তার ভাই অবসরে সময়ে লুঙ্গি পরে ঘুরে বেড়ান। তিনি একটি মাটির ঘরে বসবাস করেন এবং সবার সাথেই খুলামেলাভাবে মিশেন। তারা বাংলাদেশের ফলকে অনেক ভালোবাসেন। আমাদের ডাক্তার ভাই ও দিদি বাংলায় কথা বলতে পারেন। তাদের সন্তানদের বাংলা ভাষা শেখাচ্ছেন। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েন।

নিউজটি শেয়ার করুন

মন্তব্য

এ জাতীয় আরো খবর.

প্রকাশক ও সম্পাদকঃ রেজাউল হক(রনি),

কারিগরি সহযোগিতায়: অক্ষ টেক

প্রধান কার্যালয়: ৫০৭/সি,  খিলগাও ঢাকা-১২১৯ । মোবাইল: ০১৭১৩৬১৫৫৩৩,০১৬১১২২৬৬৯৯ ইমেইল: contactbd7news@gmail.com
themebd7news6534333223
© All rights reserved 2016-2023, bd7news.com