বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের আশ্বাসে দেশব্যাপী কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছেন ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
বৈঠক শেষে রাত একটার পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে আজ থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক নিয়মে হবে।
বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার বাসভবনে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে রাত নয়টা থেকে টানা প্রায় চার ঘণ্টা বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, বৈধ লাইসেন্স সংগ্রহের জন্য চালকদের ২০২০ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে।
“যে লাইসেন্স দিয়ে তারা গাড়ি চালাচ্ছিলেন, সেই লাইসেন্সটি বহাল থাকবে। কিন্তু আগামী ৩০শে জুনের মধ্যে তারা তাদের সঠিক লাইসেন্সটি বিআরটিএ’র মাধ্যমে গ্রহণ করবেন, সেই ভাবে তারা কাজ শুরু করবেন—এই প্রতিশ্রুতিতে আমরা একমত হয়ে সেই দাবিটা মেনে নিয়েছি।”
“এছাড়া বিভিন্ন প্রকার গাড়ির ফিটনেস কাগজপত্র হালনাগাদ করতে যা সরকারি ফি ছিল তার প্রায় চারগুণ ফাইনের (জরিমানা) পরিমাণ ছিল। তারা সময়মত সেটা পরিশোধ করতে পারেনি বলেই এই ফাইন হয়েছে। আমরা বলেছি, মাননীয় যোগাযোগ মন্ত্রী সেগুলো পরীক্ষানিরীক্ষা করে সেইগুলো মেনে নেবেন বলে আমরা তাদের আশ্বাস দিয়েছি।”
তিনি আরো বলেন, ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যে নয় দফা দাবি, তার মধ্যে যেগুলো আইন সংশোধনের ব্যাপার সেগুলো যোগাযোগ মন্ত্রীর কাছে সুপারিশসহ পাঠানো হবে।
“যাতে করে তিনি পরবর্তী ব্যবস্থা, আইন মন্ত্রণালয়ে যেভাবে যেভাবে করার সেভাবে তিনি প্রক্রিয়ায় যেতে পারেন।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, লাইসেন্স যথাযথ করার জন্য চালকদের সময় দেয়া হলেও অবৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে কাউকে গাড়ি চালাতে দেয়া হবে না।
এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই জায়গায় কঠিন অবস্থানে থাকবে বলে তিনি জানান।
মালিক-শ্রমিকদের জোট কী বলছে?
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের আন্দোলনের মুখে সরকার দাবি মেনে নেয়ায় তারা সন্তুষ্ট।
“মূলত ড্রাইভারদের যে জামিন অযোগ্য মামলা হবে, ওইগুলা আইনের ব্যাপার, ওটা ঠিক করতে সময় লাগবে। কিন্তু ওনারা (সরকার) কথা দিছে, মন্ত্রণালয় সুপারিশ পাঠিয়ে ওটা ঠিক করে দেবে।”
“এখন যেসব বিষয় নিয়ে সমস্যা আছে, আমরা আলোচনা করেছি তাতে বিআরটিএ’র সঙ্গে আলাদা আলাদা বসতে হবে। সেখানেও কিছু জটিলতা আছে, সেগুলো আলাপ আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। এজন্য বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হইছে।”
মিঃ খান বলেন, “পুলিশের সঙ্গেও কিছু কিছু সমস্যা আছে, অ্যাডিশনাল আইজি হাইওয়েকে দায়িত্ব দেয়া হইছে যেন অযথা কোন হয়রানি না হয়, হইলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন আশ্বাস আমাদের দেয়া হইছে।”
এখন সরকার তাদের দাবি মেনে নেবার পর তারা সড়ক পরিবহন আইন মেনে চলবেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে মিঃ খান বলেছেন, “আইন তো মেনে চলতেই হবে। কিন্তু আমাদের ওপর যে আইন দেয়া হইছে, কিছু কিছু ধারায় এমন জরিমানা ধার্য করছে যে সেটা গাড়ি চালাইয়া দেয়া সম্ভব না, জায়গা (জমি) বেইচা দেয়া লাগে এমন অবস্থা।”
“এই সমস্যা ও অন্যান্য সমস্যা সমাধান করা হবে বলে আমাদের আশ্বাস দেয়া হইছে, আর আমরা সেই আশ্বাসের প্রেক্ষাপটে কর্মসূচী প্রত্যাহার করছি।”
গত ১৮ই নভেম্বর সরকার নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকরের ঘোষণা দেবার পর থেকে তা সংশোধনের দাবি তুলে সেদিন থেকেই দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় পরিবহন ধর্মঘট ও কর্মবিরতি শুরু হয়।
১৯শে নভেম্বর ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ পরদিন থেকে অর্থাৎ ২০শে নভেম্বর থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন।
পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী পরিবহনও ব্যাহত হয় বিভিন্ন জেলায়, যে কারণে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
সূত্র-বিবিসি নিউজ,
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ রেজাউল হক(রনি),
কারিগরি সহযোগিতায়: অক্ষ টেক