ঢাকা    ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ইং | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মধুপুরে কোটি কোটি টাকার কলা নিয়ে বিপাকে চাষীরা

  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০২০, ৯.৫৫ পূর্বাহ্ণ
  • ২০০ বার পঠিত

ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি ঃ টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে করোনার প্রভাবে কোটি-কোটি
টাকার উৎপদিত কলা নিয়ে লোকসানে কৃষকরা। কলা নিয়ে বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের কলা চাষীরা।
হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে গাড়াঞ্চলের সহ¯্রাধিক কলাচাষী। কলার আড়ৎ ও মোকাম বন্ধ থাকায়
বেচা-কেনা বন্ধ হওয়ার দরুণ স্থানীয় পর্যায়েও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
স্থানীয় কলা চাষী, ব্যাপারী ও আড়ৎদারদের সাথে কখা বলে জানা যায়, কলার রাজধানী লাল মাটির
মধুপুর গড়াঞ্চল। লালমাটি কলা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগি বিধায় এ এলাকার উৎপাদিক কলা
ঢাকা, রাজশাহী, কক্সবাজার, টেকনাফ, সিলেট, নাটোর, ভৈরবসহ দেশের নানা জেলায় মধুপুর
গড়াঞ্চলের কলার সমাগম ঘটে থাকে। এ অঞ্চলের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হলো কৃষি। আনরস ও
কলা মূলত এ অঞ্চলের মানুষদের অর্থনীতি সচল রাখে। প্রতি বছর কোটি-কোটি টাকা লেনদেন
হয়ে থাকে। সারা বছর কলা উৎপাদিত হয়। এখানে কলাকে কেন্দ্র করে চাষী, শ্রমিক, কুলি, পরিবহণ
ও পরিবহণ শ্রমিকসহ নানা মানুষের রুটি-রুজি হয়। কলা চাষে অন্যান্য ফসলের চেয়ে খরচ বেশি
হয়। প্রতিটি কলা গাছে কলা বিক্রি পর্যন্ত গাছ প্রতি খরচ হয় এক থেকে দেড়শ টাকা। ১
বিঘা জমিতে ৩‘শত থেকে সাড়ে ৩‘শত কলা গাছ লাগনো যায়। এতে পরিচর্যা করতে
প্রতিবিঘা খরচ হয় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এ জন্য এ এলাকার কৃষকরা ব্যয়বহুল কলা চাষের
অর্থের যোগানের জন্য বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক, এনজিও এবং গ্রাম্য মহাজনদের
নিকট থেকে বড় সুদে ঋণ নিয়ে কলা চাষে বিনিয়োগ করে থাকে।
এ বছর সরাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও করোনার প্রভাব পড়ায় কলা কেনা-বেচা থমকে গেছে। এ জন্য
কলার ক্রেতা অনেকটাই কমে গেছে। ফলে কলা চাষীদের ব্যায় বহুল অর্থে উৎপাদিত কলা নিয়ে মহা
বিপাকে পড়েছে চাষীরা। কি দিয়ে তাদের ধার-দেনা, ঋণ পরিশোধ করবে এ নিয়ে দিশেহারা হয়ে
পড়েছে। বাগানে কলা গাছেই কলা পাকতে শুরু করায় কৃষদের চিন্তা আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
সরেজমিনে মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়নের পীরগাছা, ভবানটিকি ও মমিনপুর গ্রামে
গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জান যায়, এ তিন গ্রামের কৃষকদের প্রধান ফসল হলো কলা। কলা
চাষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত তাদের আবাদ ফসল। এ এলাকর প্রান্তিক কৃষকরা ৫ বিঘা থেকে ২-
৩‘শত বিগা পর্যন্ত রয়েছে তাদের কলা বাগান। কলা চাষে বিনিযোগ করতে ২ লাখ থেকে ২০/৩০
লাখ টাকা পযন্ত রয়েছে ঋণ। এর মধ্যে গ্রাম্য মহাজনীর ঋণ নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা সবেচেয়ে
বেশি। প্রতি মাসে দিতে হচ্ছে এ ঋণের মাসিক কিস্তি। এখন কলা বিক্রির উপযুক্ত সময়। আর এ
মৌসুমি সময়ে কলা বিক্রি থমকে যাওয়ায় বসে পড়েছে তারা। কথা হয় পীরগাছা গ্রামের
কলাচাষী রুকনুজ্জামান খানের সাথে। তিনি ২৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ করে কলা
চাষ করেছেন। শামছুল আলম ২‘শত বিঘা জমি লিজ নিয়ে কলা চাষ করেছেন। তার ঋণ ৩০ লাখ
টাকা। এভাবে জমি লিজ নিয়ে সাজু ২‘শত বিঘা, সাখওয়াত ৭৫ বিঘা, দেলোয়ার ১৩ বিঘা,
ফজলু শেখ ১৫ বিঘা, হানিফ ৮ বিঘা, লিচু খান ২‘শত বিঘা, হালিম সরকার ৫০ বিঘা,
আজিজ ৩০ বিঘা, ইদ্রিস খান ৪০ বিঘা, শেখ আলহাজ ৩০ বিঘা, বাদশা ২৫ বিঘা, আনোয়ার
১২০ বিঘা, ফরহাদ, ১২০, বিঘাসহ গড়াঞ্চলের শতশত কৃষক জমি লিজ ও ঋণ নিয়ে কলার বাগান
করেছে।
এসব কলা চাষীরা জানান, ছোট কৃষকদের ২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ৩০/৪০ লাখ
টাকা ঋণ রয়েছে। এবার কলার বাজার ও বিক্রি থমকে থাকায় প্রতি কৃষকেরই ব্যাপকভাবে

লোকসান গুনতে হবে। সার, বিষ, মেডিসিন, ভিটামিনসহ নানা কৃষি পণ্যের দোকানে বাকি,
শ্রমিকের মজুরী, বড় সুদের ঋণের বোঝা রয়েছে মাথার উপর। এ নিয়ে কৃষকের ঘুম হারাম হয়ে
গেছে।
কলার ব্যাপারী আ. জলিল জানান, এ এলাকা থেকে কলা কিনে চট্রগাম, ঢাকা, সাতকানিয়া,
কক্সবাজার, সিলেট, টেকনাফ, ভৈরবসহ নানা জেলায় কলা কিনে পাঠাতাম। এখন সব মোকাম বন্ধ। এ
বছর কৃষক, পাইকার, চাষী প্রত্যেকেরই লোকসান গুনতে হচ্ছে।
কলা চাসী সাজু মিয়া জানান, প্রতি বছর তিনি প্রায় কোটি টাকার কলা বিক্রি করেন। এ
বছর কলা চাষের খরচ তোলাই কঠিন হযে পড়েছে। কলা চাষী লিচু খান, সাখাওয়াত ও শামছুল আলম
জানান, করোনার প্রভাবে কলার আড়ৎ বন্ধ থাকায় পাইকাররা কলা কেনা বন্ধ করেছেন। দুই একজন
কিনলেও অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাতে আবাদের করচও উঠবে না। তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা ঋণ
কি করে পরিশোধ করবে। এ চিন্তায় তারা হতাশা হয়ে পড়েছেন। তাদের দাবী কৃষি প্রনোদনা বা
ভর্তুকির ব্যবস্থা করে এলাকার কৃষকদের ক্ষতি পোষানো।
এ ব্যাপারে মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান জানান, উপজেলার
কৃষকদের প্রনোদনা দেয়া হচ্ছে । পর্যায়ক্রমে কলা চাষীদেরও প্রনোদনার আওয়াতায় আনা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

মন্তব্য

এ জাতীয় আরো খবর.

প্রকাশক ও সম্পাদকঃ রেজাউল হক(রনি),

কারিগরি সহযোগিতায়: অক্ষ টেক

প্রধান কার্যালয়: ৫০৭/সি,  খিলগাও ঢাকা-১২১৯ । মোবাইল: ০১৭১৩৬১৫৫৩৩,০১৬১১২২৬৬৯৯ ইমেইল: contactbd7news@gmail.com
themebd7news6534333223
© All rights reserved 2016-2023, bd7news.com