স্থ্যসেবার সেরা গন্তব্য এখন মালয়েশিয়া। ইতোমধ্যে সফল বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা ও ভ্রমণের গন্তব্য হিসেবে বিশেষজ্ঞদের ‘স্বাস্থ্যসেবা মার্ভেল’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। উন্নত অবকাঠামোর জন্য দেশটি এমন সাফল্য দেখিয়েছে। শুধু তাই নয়, ইউএসভিত্তিক আন্তর্জাতিক বসবাসের মাধ্যমে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিকভাবে ‘স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশ্বের সেরা দেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
এই অর্জন সম্পর্কে দেশটির হেলথ কেয়ার ট্র্যাভেল কাউন্সিলর (এমএইচটিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেরেন আজলি বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত থেকে উন্নততর করার চেষ্টা করছি। আর উন্নতির পেছনে রয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে সেবা নিতে আসা ভ্রমণ-পিপাসুদের।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল জার্নালে প্রকাশ হয়েছে, গত দুই বছর শুধু বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণে আসা প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। প্রতিযোগিতামূলকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যের, উষ্ণ, আতিথিয়েতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে ২০১৮ সালে ১.২ মিলিয়নেরও বেশি স্বাস্থ্যসেবা পর্যটককে আকর্ষণ করেছে।
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল লিভিং ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বসেরা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। তালিকায় তিন থেকে পাঁচের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে থাইল্যান্ড, ইকুয়েডর, মেক্সিকো এবং কোস্টারিকা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মালয়েশিয়ার অধিকাংশ চিকিৎসক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অথবা অস্ট্রেলিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তারা সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন। এ ছাড়াও, দেশটিতে রয়েছে উন্নত অবকাঠামো।
এসব কারণেই বিভিন্ন দেশ থেকে চিকিৎসার জন্য পর্যটকরা ছুটে আসেন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে গবেষণার কাজে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা দ্য জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) মালয়েশিয়ার চারটি হাসপাতালকে ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। হাসপাতালগুলোর দুটির অবস্থান কুয়ালালামপুর এবং দুটির অবস্থান পেনাং-এ।
পেনাং-এ অবস্থানরত ইন্টারন্যাশনাল লিভিংয়ের কেইথ হকটন বলেন, ‘ডাক্তার দেখানো ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় খরচ হয়েছে মাত্র ৪৪ ডলার। সকালে দেখানোর পর বিকেলে রিপোর্ট হাতে পাই। মালয়েশিয়ার চিকিৎসা সেবা উন্নত ও ভয়হীন হওয়ায় এটি সবাইকে আকর্ষণ করছে’।
মালয়েশিয়ায় এখন দুই শতাধিক আধুনিক হাসপাতাল রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় সেবাগ্রহণকারীদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিতে মালয়েশিয়া হেলথ কেয়ার ট্রাভেল কাউন্সিল (এমএইচটিসি) কাজ করছে বলে জানান কাউন্সিলের কর্তারা।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এখন প্রতিবছর কয়েক লাখ লোক চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। দেশটির চিকিৎসা ও সেবার মান বিশ্বমানের। ওরা বেশ যত্ন নিতে জানে। হাসপাতালগুলোয় ভিড়ও কম।
এমএইচটিসির ব্যবস্থাপনায় মালয়েশিয়ার কিছু শীর্ষ হাসপাতালগুলোয় রোগীর ভিড় কম। সেই সঙ্গে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় বেশ গুরুত্ব দেয় তারা। সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি হাসপাতালই বিশেষায়িত চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।
কেপিজে তাওয়াক্কাল বিশেষায়িত হাসপাতাল: কেপিজে হেলথ কেয়ার গ্রুপের ২৫টি হাসপাতাল আছে মালয়েশিয়াজুড়ে। কুয়ালালামপুরেই আছে সাতটি। কুয়ালালামপুরের তাওয়াক্কাল হাসপাতালটি সাধারণ চিকিত্সার জন্য ভালো হলেও অর্থো, গ্যাস্ট্রো ও রিউমেটোলজির জন্য এটি বিশেষায়িত। তবে এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হেলথ স্ক্রিনিং ব্যবস্থা।
এখানকার প্রিমিয়াম স্ক্রিনিং ও ওয়েলনেস সেন্টারে চিকিত্সা খরচ নাগালের মধ্যে। কেপিজে হাসপাতালের আন্তর্জাতিক বিপণনের গ্রুপ নির্বাহী জালিফা ইয়াসমীন ইব্রাহিম বলেন, পর্যটকদের হেলথ স্ক্রিনিংয়ের জন্য এখানে বিশেষ সাশ্রয়ী প্যাকেজ রয়েছে। বাংলাদেশি রোগীদের জন্য প্রয়োজনে এখানে দোভাষী সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে।
পানতাই হাসপাতাল: কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রস্থলে এটি আরেকটি হাসপাতাল। এটিও আরেকটি জেনারেল হাসপাতাল। এখানে অনেক বাংলাদেশি রোগী আসেন বলে জানান পানতাই হাসপাতালের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা বিদ্যাধরা এসডি।
তিনি বলেন, ‘ক্যানসার ও ইউরোলজির বিভিন্ন রোগের জন্য এই হাসপাতাল বিখ্যাত। তবে হৃদরোগের চিকিত্সায়ও আমাদের আছে বিশ্বমানের চিকিত্সা ব্যবস্থা। এখানকার চিকিৎসকেরা নিয়মিত বাংলাদেশে আসেন বিভিন্ন হাসপাতাল ও রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করতে। বিশ্বমানের সুবিশাল পানতাই হাসপাতালে পর্যটকদের জন্য হেলথ স্ক্রিনিং প্যাকেজ রয়েছে। আছে বাংলাদেশি দোভাষীও’।
ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট: হৃদযন্ত্র ও যকৃতের চিকিত্সার জন্য এটিকে এশিয়ার অন্যতম সেরা হাসপাতাল বলে মনে করেন ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক কুমারা গুরুপ্পারান। তিনি বলেন, হৃদরোগ চিকিৎসার সর্বশেষ প্রযুক্তির সবগুলোই আছে এখানে। ৪৬১ জন রোগীর জন্য এখানে আছেন ১ হাজার ৯০০ চিকিৎসাকর্মী। এ পর্যন্ত চার হাজারের বেশি বাইপাস অপারেশন হয়েছে এখানে।
কুয়ালালামপুরের উপকণ্ঠে সুবাংযায়া বিমানবন্দর ঘেঁষে এটি একটি বিলাসবহুল হাসপাতাল। মূলত ক্যানসার, মেরুদণ্ড, মস্তিষ্কসহ জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালটি বিখ্যাত। পিঠব্যথা ও মেরুদণ্ডের সমস্যার চিকিৎসায় এক্সক্লিফ নামের স্বল্প ব্যথার চিকিৎসা পদ্ধতি এই হাসপাতালেই সবচেয়ে ভালো হয় বলে দাবি করেন দেশটির অর্থোপেডিক সার্জন আপ্পাসামি ভেলু।
এ ছাড়া রক্তনালী ও ক্যানসারের চিকিৎসাই এটি বিখ্যাত। রামসে ডারবি হাসপাতালে চিকিৎসা খরচ বেশি হলেও এখানকার পরিবেশ ও যত্নের নমুনা দেখলে তা মানানসই বলেই মনে হয়।
মালয়েশিয়ার প্রায় সবকটি বড় হাসপাতালে বিদেশি রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা আছে। এখানে তারা দ্রুততার সঙ্গে সহজে চিকিৎসা পেতে বিশেষ সহায়তা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিদেশিদের সবধরনের সহায়তা করতে আছে এমএইচটিসি। কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আছে এমএইচটিসি লাউঞ্জ। বিমানবন্দর থেকেই বিদেশি চিকিৎসাপ্রার্থীরা বিভিন্ন সুবিধা পেতে পারেন। তাদের ওয়েব ঠিকানা: www.mhtc.org.my
এমএইচটিসি মালয়েশিয়ার হাসপাতালগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসাপ্রত্যাশীদের যোগাযোগ বাড়াতে কাজ করছে। বাংলাদেশে এমএইচটিসির স্থানীয় সমন্বয়ক প্রতিষ্ঠান হলো গ্রিন ডেল্টা ইন্সুরেন্সের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান জিডি অ্যাসিস্ট লিমিটেড। তারা বাংলাদেশি রোগীদের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে থাকে। প্রাথমিক পরামর্শ থেকে শুরু করে চিকিৎসক বা হাসপাতাল নির্বাচন, যোগাযোগ ইত্যাদি সহযোগিতা করে থাকে তারা। এমনকি মালয়েশিয়ায় চিকিৎসাপ্রত্যাশী বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্য বিমার সুবিধাও দিচ্ছে জিডি অ্যাসিস্ট।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ রেজাউল হক(রনি),
কারিগরি সহযোগিতায়: অক্ষ টেক