ঢাকা    ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং | ১লা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বিরিয়ানি ছাড়া কিছুই খাচ্ছে না সুন্দরবনের বানরেরা

  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৯, ১০.২৯ পূর্বাহ্ণ
  • ২৮৬ বার পঠিত

সুন্দরবনের বানরের খাদ্যাভাসে বিস্ময়কর পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। তারা ফল, গাছের মূল, পাতা ছেড়ে বিরিয়ানিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সুন্দরবনের ভারতীয় অংশে এ পরিবর্তন দেখা গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদপ্রতিদিন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র-এই তিন নদীর অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম সুন্দরবন। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে।

তবে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের জঙ্গলে ঘুরে দেখা গেল, গাছের ফল পাতা খাওয়াই যাদের কাজ, সেই বানর এখন আর ফল-পাতায় তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্রের আশপাশে থাকা বানরদের খাদ্যাভ্যাসে ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন। প্যাকেটজাত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে তারা। এমনই ছবি দেখা গেল সুন্দরবনের সজনেখালী বা ঝড়খালির পর্যটন কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায়। বিস্কুটের প্যাকেট, বিরিয়ানি চিপসের প্যাকেট থেকে শুরু করে ঠান্ডা পানীয়-সব খাবার এখন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে! এসব খাদ্যের লোভে জঙ্গল থেকে লাফিয়ে পর্যটকদের ভুটভুটি (এক ধরনের নৌযান) বা লঞ্চ জেটিতে চলে আসছে বানরের দল।

তবে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন একদিনে হয়নি। দিনের পর দিন প্যাকেটজাত খাদ্য মুখের সামনে পাওয়ার ফলেই বানরের খাদ্যাভাসে এই পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু বানরের এই অভ্যাস বদলে মহা বিপদেই পড়ছেন পর্যটকরা। কারণ সুযোগ পেলেই তাদের হাতের খাবার কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে বানরের দল।

Monkey1

বলা হচ্ছে, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের খাবারের অভাব কোনোদিনই ছিল না। আজও নেই। তবুও দেখা যাচ্ছে কোথাও যেন ঘটেছে ছন্দপতন। এ বিষয়ে এক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ বলছেন, জঙ্গলে খাবারের অভাব নেই। বিশেষ করে বানররা যেসব খাবার খায় সেগুলো তো যথেষ্ট পরিমাণে আছে। অন্যদিকে, কেওড়া হেতাল গাছের শ্বাসমূল ঠেসমূল এই সবই বানরদের খাবারের তালিকা রয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বানররা মানুষের খাবারের বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে।

কয়েকদিন আগে সজনেখালীতে (সুন্দরবনের একটি স্থান) গিয়ে দেখা গেল, ফেলে যাওয়া বিরিয়ানির প্যাকেটের দিকে নজর বানরদের। মা এবং বাচ্চা বানর চেটেপুটে খাচ্ছে সেই বিরিয়ানির প্যাকেট। এমনকি ঢুকে পড়ছে ডাস্টবিনের মধ্যেও।

অনেকেই মনে করছেন খেলাচ্ছলে পর্যটকদের দেয়া খাবার বানরদের জঙ্গল ছাড়ার প্রধান কারণ। তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় ভারতের বন বিভাগের কর্মকর্তারা। কারণ বানরের বাঁদরামি সহ্য করতে না পারলে কামড় খেতে হচ্ছে পর্যটকদের।

এ বিষয়ে প্রাণী সংরক্ষণে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের (ডব্লিউডব্লিউএফ) বানর গবেষক ড. সঙ্গীতা মিত্র বলেন, ‘সহজলভ্য খাবার পেতে পেতে বানর শুধু খাবারের অভ্যাসই বদলায়নি, সেই সঙ্গে নিজেদের বিপদও ডেকে আনছে। এর ফলে বানর এবং মানুষ উভয়েই সমস্যায় পড়ছে। কারণ খাবার না পেলে তারা আঁচড় কামড় দিয়ে আক্রমণ করছে পর্যটকদের। ফলে বানর থেকে মানুষের মধ্যে নানা অসুখ ছড়িয়ে পড়ছে। আবার উলটোটাও হচ্ছে।’

পরিবেশবিদদের মতে, পর্যটকরাই মূলত সুন্দরবন এসে বানরের খাবারের অভ্যাসে পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। তবে এটি শুধু সুন্দরবনের নয়, গোটা দেশের সমস্যা।

নিউজটি শেয়ার করুন

মন্তব্য

এ জাতীয় আরো খবর.

প্রকাশক ও সম্পাদকঃ রেজাউল হক(রনি),

কারিগরি সহযোগিতায়: অক্ষ টেক

প্রধান কার্যালয়: ৫০৭/সি,  খিলগাও ঢাকা-১২১৯ । মোবাইল: ০১৭১৩৬১৫৫৩৩,০১৬১১২২৬৬৯৯ ইমেইল: contactbd7news@gmail.com
themebd7news6534333223
© All rights reserved 2016-2023, bd7news.com